অণুজীবের জগৎ Flashcards
(6 cards)
অনুজীব কাকে বলে
অনুজীব হলো সেই সকল ক্ষুদ্র জীব যাদের খালি চোখে দেখা যায় না। এদের দেখতে অবশ্যই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। অনুজীব একককোষী হতে পারে, আবার কোষের কলোনি তৈরি করেও বসবাস করতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
* ক্ষুদ্র আকার: এদের আকার এতটাই ছোট যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এদের পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়।
* এককোষী বা বহুকোষী: কিছু অনুজীব একটিমাত্র কোষ দিয়ে গঠিত (যেমন - ব্যাকটেরিয়া), আবার কিছু অনুজীব অনেক কোষের সমষ্টি (যেমন - কিছু ছত্রাক)।
* সর্বব্যাপী: অনুজীব মাটি, জল, বায়ু এবং অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীর ভেতরে ও বাইরে সর্বত্র বিরাজ করে।
* বিভিন্ন প্রকার: অনুজীবের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, আর্কিয়া এবং প্রোটিস্টা অন্তর্ভুক্ত। এদের গঠন ও কাজের প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন।
সহজভাবে বলতে গেলে, অনুজীব হলো আমাদের চারপাশে থাকা অতি ক্ষুদ্র জীবন্ত সত্তা যাদের দেখতে পাওয়ার জন্য মাইক্রোস্কোপের সাহায্য নিতে হয়।
ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য
ব্যাকটেরিয়া হলো একককোষী জীবাণু যা পৃথিবীর প্রায় সকল পরিবেশে বিদ্যমান। এদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
* কোষের গঠন: ব্যাকটেরিয়ার কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস (পরিপূর্ণ নিউক্লিও আবরণীযুক্ত) থাকে না। এদের জেনেটিক উপাদান (DNA) সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে এবং একে নিউক্লিওয়েড (nucleoid) বলা হয়। এছাড়াও এদের কোষে অন্যান্য অঙ্গাণু যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি ইত্যাদি অনুপস্থিত। তবে এদের রাইবোসোম (ribosome) থাকে যা প্রোটিন সংশ্লেেষে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর পেপটিডোগ্লাইকান (peptidoglycan) নামক উপাদান দিয়ে গঠিত।
* আকার ও আকৃতি: ব্যাকটেরিয়ার আকার সাধারণত ০.৫ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এদের বিভিন্ন আকৃতি দেখা যায়, যেমন গোলাকার (cocci), দণ্ডাকার (bacilli), কমা আকৃতির (vibrio), স্পাইরাল (spirilla), এবং পেঁচানো (spirochetes)।
* প্রজনন: ব্যাকটেরিয়া প্রধানত দ্বিখণ্ডন (binary fission) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়ায় একটি ব্যাকটেরিয়া কোষ দুটি অভিন্ন কোষে বিভক্ত হয়। কিছু ব্যাকটেরিয়াতে संयुग्मन (conjugation), रूपांतरण (transformation), বা transduction-এর মাধ্যমে জিনগত উপাদানের আদান-প্রদান ঘটতে পারে।
* বিপাক: ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের বিপাক প্রক্রিয়া প্রদর্শন করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেদের খাদ্য তৈরি করতে পারে (যেমন সায়ানোব্যাকটেরিয়া)। আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া জৈব বা অজৈব যৌগ জারিত করে শক্তি উৎপাদন করে (কেমোসিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়া)। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া মৃত জৈব পদার্থ (স্যাপ্রোফাইট) বা জীবন্ত প্রাণীর উপর (পরজীবী) নির্ভর করে পুষ্টি গ্রহণ করে।
* চলন: কিছু ব্যাকটেরিয়া ফ্ল্যাজেলা (flagella) নামক সূক্ষ্ম তন্তুর সাহায্যে চলাচল করতে পারে। আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া গ্লাইডিং (gliding) বা অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করে।
* পরিবেশের সাথে অভিযোজন: ব্যাকটেরিয়া প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের রক্ষা করার জন্য স্পোর (spore) নামক একটি সুপ্ত কাঠামো তৈরি করতে পারে। স্পোর অত্যন্ত প্রতিরোধী এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে। যখন পরিবেশ অনুকূল হয়, তখন স্পোর থেকে নতুন ব্যাকটেরিয়া কোষের জন্ম হয়।
* বিভিন্নতা: ব্যাকটেরিয়া জীবজগতের একটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠী। এরা মাটি, জল, বায়ু এবং অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীর অভ্যন্তরসহ প্রায় সকল পরিবেশে বাস করতে পারে।
* গুরুত্ব: ব্যাকটেরিয়া পরিবেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, যেমন পুষ্টি চক্র (নাইট্রোজেন চক্র), জৈব পদার্থের পচন ইত্যাদি। কিছু ব্যাকটেরিয়া মানুষের জন্য ক্ষতিকর (রোগ সৃষ্টিকারী), আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া খাদ্য উৎপাদন (যেমন দই তৈরি) এবং ঔষধ শিল্পে (যেমন অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন) ব্যবহৃত হয়। আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারী কিছু ব্যাকটেরিয়া হজমে সাহায্য করে।
আশা করি এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করবে। যদি আপনার আরও কিছু জানার থাকে, তবে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
অদ্য প্রাণীর বৈশিষ্ট্য
আদ্যপ্রাণী (Protozoa) হলো একককোষী ইউক্যারিওটিক জীবদের একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠী। এদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
* কোষের গঠন: এরা একককোষী জীব এবং এদের কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস সহ অন্যান্য অঙ্গাণু (যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম) বিদ্যমান। ব্যাকটেরিয়ার মতো এদের কোষে কোষ প্রাচীর থাকে না (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)।
* আকার ও আকৃতি: আদ্যপ্রাণীর আকার বিভিন্ন হতে পারে, সাধারণত কয়েক মাইক্রোমিটার থেকে শুরু করে কয়েক মিলিমিটার পর্যন্ত দেখা যায়। এদের আকার গোলাকার, ডিম্বাকার, লম্বাটে বা অনিয়মিত হতে পারে।
* চলন: আদ্যপ্রাণীরা বিভিন্ন উপায়ে চলাচল করতে পারে। এদের মধ্যেpseudopodia (অ্যামিবার মতো), flagella (ইউগ্লেনার মতো), cilia (প্যারামেসিয়ামের মতো) অথবা সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে চলন দেখা যায়। কিছু আদ্যপ্রাণী স্থান পরিবর্তন করতে পারে না এবং কোনো বস্তুর সাথে লেগে থাকে।
* পুষ্টি: আদ্যপ্রাণীরা পরভোজী (heterotrophic)। এরা অন্যান্য ছোট জীব, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল বা জৈব কণা ভক্ষণ করে পুষ্টি গ্রহণ করে। কিছু আদ্যপ্রাণী ফ্যাগোসাইটোসিস (phagocytosis) প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে, আবার কিছুতে সাইটোস্টোম (cytostome) নামক মুখের মতো অঙ্গ থাকে যার মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে।
* প্রজনন: আদ্যপ্রাণীরা অযৌন এবং যৌন উভয় প্রকার প্রজনন প্রক্রিয়া প্রদর্শন করে। অযৌন প্রজনন সাধারণত দ্বিখণ্ডন (binary fission), বহুখণ্ডন (multiple fission) বা বাডিং (budding) প্রক্রিয়ায় ঘটে। যৌন প্রজননে দুটি ভিন্ন গ্যামেটের মিলন ঘটে।
* বাসস্থান: আদ্যপ্রাণীরা জল (মিঠা ও লবণাক্ত), মাটি এবং অন্যান্য ভেজা পরিবেশে বসবাস করে। কিছু প্রজাতি পরজীবী হিসেবে অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীর দেহেও বাস করে। এমনকি উষ্ণ প্রস্রবণের মতো চরম পরিবেশেও কিছু আদ্যপ্রাণীকে দেখা যায়।
* বিভিন্নতা: আদ্যপ্রাণীর মধ্যে বিশাল বৈচিত্র্য দেখা যায়। এদের বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন আকার, আকৃতি, চলন পদ্ধতি এবং জীবনযাত্রা প্রদর্শন করে।
* গুরুত্ব: আদ্যপ্রাণীরা খাদ্য শৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ছোট জীবদের খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিছু আদ্যপ্রাণী রোগ সৃষ্টিকারী (যেমন ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্লাজমোডিয়াম)। আবার কিছু আদ্যপ্রাণী গবেষণাগারে মডেল organism হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কিছু সাধারণ আদ্যপ্রাণীর উদাহরণ: অ্যামিবা (Amoeba), প্যারামেসিয়াম (Paramecium), ইউগ্লেনা (Euglena), প্লাজমোডিয়াম (Plasmodium), ট্রিপানোসোমা (Trypanosoma), গিয়ার্ডিয়া (Giardia)।
ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য
ছত্রাক (Fungi) হলো ইউক্যারিওটিক জীবের একটি বৃহৎ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী। এরা উদ্ভিদ নয়, তবে একসময় এদের উদ্ভিদ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হতো। এদের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
* কোষের গঠন: ছত্রাকের কোষ প্রাচীর কাইটিন (chitin) নামক উপাদান দিয়ে গঠিত, যা ব্যাকটেরিয়ার পেপটিডোগ্লাইকান বা উদ্ভিদের সেলুলোজ থেকে ভিন্ন। এদের কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য অঙ্গাণু (যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম) বিদ্যমান।
* শারীরিক গঠন: বেশিরভাগ ছত্রাক বহুকোষী এবং সূত্রাকার গঠনযুক্ত, যা হাইফি (hyphae) নামে পরিচিত। অসংখ্য হাইফি একত্রিত হয়ে মাইসেলিয়াম (mycelium) গঠন করে, যা ছত্রাকের ভেজিটেটিভ বা অঙ্গজ অংশ। কিছু ছত্রাক একককোষী (যেমন ঈস্ট)।
* পুষ্টি: ছত্রাক পরভোজী (heterotrophic)। এদের ক্লোরোফিল নেই, তাই এরা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না। এরা মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টি শোষণ করে (স্যাপ্রোফাইট), অথবা জীবন্ত উদ্ভিদ বা প্রাণীর উপর পরজীবী হিসেবে বাস করে পুষ্টি গ্রহণ করে। কিছু ছত্রাক মিথোজীবী (symbiotic) সম্পর্ক স্থাপন করে, যেমন মাইকোরাইজা (উদ্ভিদের মূলের সাথে)।
* প্রজনন: ছত্রাক অযৌন এবং যৌন উভয় প্রকার প্রজনন প্রক্রিয়া প্রদর্শন করে। অযৌন প্রজনন স্পোর (বীজাণু) তৈরির মাধ্যমে, খণ্ডন (fragmentation) বা বাডিং (budding)-এর মাধ্যমে ঘটতে পারে। যৌন প্রজননে দুটি ভিন্ন গ্যামেটের মিলন ঘটে এবং বিভিন্ন প্রকার স্পোর তৈরি হয়।
* স্পোর: ছত্রাক স্পোর তৈরি করে, যা হালকা এবং সহজে বাতাসে বা জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্পোর অনুকূল পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে নতুন ছত্রাকের জন্ম দেয়।
* বৃদ্ধি: ছত্রাক সাধারণত তাদের হাইফির অগ্রভাগের মাধ্যমে বৃদ্ধি লাভ করে। মাইসেলিয়াম মাটির নিচে বা অন্যান্য পুষ্টিকর মাধ্যমে বিস্তৃত হতে পারে।
* বিভিন্নতা: ছত্রাকের মধ্যে বিশাল বৈচিত্র্য দেখা যায়। এদের বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন আকার, আকৃতি, রঙ এবং জীবনযাত্রা প্রদর্শন করে। পরিচিত ছত্রাকের মধ্যে রয়েছে মাশরুম, মোল্ড, ঈস্ট ইত্যাদি।
* গুরুত্ব: ছত্রাক পরিবেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এরা মৃত জৈব পদার্থের পচনে সাহায্য করে এবং পুষ্টি চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিছু ছত্রাক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় (যেমন মাশরুম), আবার কিছু ঔষধ উৎপাদনে (যেমন পেনিসিলিয়াম থেকে পেনিসিলিন) এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়। কিছু ছত্রাক উদ্ভিদ ও প্রাণীদের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
আশা করি এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছত্রাক সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দেবে। যদি আপনার আরও কিছু জানার আগ্রহ থাকে, তবে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
শৈবালের বৈশিষ্ট্য
শৈবাল (Algae) হলো সালোকসংশ্লেষণকারী ইউক্যারিওটিক জীবের একটি বিশাল এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী। এরা সাধারণত জলজ পরিবেশে (মিঠা জল বা সমুদ্র) বাস করে, তবে কিছু প্রজাতি ভেজা মাটিতে বা গাছের বাকলেও জন্মাতে পারে। এদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
* কোষের গঠন: শৈবাল ইউক্যারিওটিক জীব, অর্থাৎ এদের কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য অঙ্গাণু (যেমন ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বডি) বিদ্যমান। ব্যাকটেরিয়ার মতো এদের কোষে পেপটিডোগ্লাইকান থাকে না। কিছু শৈবাল একককোষী, আবার কিছু বহুকোষী এবং সূত্রাকার বা পাতার মতো গঠনযুক্ত হতে পারে।
* সালোকসংশ্লেষণ: শৈবালের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা ক্লোরোপ্লাস্টের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের খাদ্য তৈরি করতে পারে। এদের ক্লোরোপ্লাস্টে ক্লোরোফিল এবং অন্যান্য রঙ্গক (যেমন ক্যারোটিনয়েড, ফিকোসায়ানিন, ফাইকোএরিত্রিন) থাকে যা বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে।
* শারীরিক গঠন: শৈবালের শারীরিক গঠন অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। একককোষী শৈবাল (যেমন ডায়াটম, ক্ল্যামাইডোমোনাস) থেকে শুরু করে বহুকোষী সূত্রাকার (যেমন স্পাইরোগাইরা), শাখাযুক্ত (যেমন ক্ল্যাডোফোরা) এবং বৃহৎ পাতার মতো গঠনযুক্ত (যেমন কেল্প) শৈবাল দেখা যায়। এদের কোনো প্রকৃত মূল, কাণ্ড বা পাতা নেই। বহুকোষী শৈবালের থ্যালাস (thallus) নামক একটি সরল দেহ কাঠামো থাকে।
* প্রজনন: শৈবাল অযৌন এবং যৌন উভয় প্রকার প্রজনন প্রক্রিয়া প্রদর্শন করে। অযৌন প্রজনন সাধারণত কোষ বিভাজন, খণ্ডন (fragmentation) বা বিভিন্ন প্রকার স্পোর (যেমন জুওস্পোর, অ্যাপ্লানোস্পোর) তৈরির মাধ্যমে ঘটে। যৌন প্রজননে দুটি গ্যামেটের মিলন ঘটে এবং জাইগোট (zygote) গঠিত হয়। যৌন প্রজনন আইসোগ্যামাস (দুটি একই রকম গ্যামেটের মিলন), অ্যানাইসোগ্যামাস (দুটি ভিন্ন আকারের গ্যামেটের মিলন) বা উগ্যামাস (একটি বড় স্থির ডিম্বাণু এবং একটি ছোট সচল শুক্রাণুর মিলন) হতে পারে।
* বাসস্থান: বেশিরভাগ শৈবাল জলজ পরিবেশে বাস করে। এরা মিঠা জল, লবণাক্ত জল, পুকুর, হ্রদ, নদী, সমুদ্র এবং এমনকি বরফের মধ্যেও জন্মাতে পারে। কিছু প্রজাতি স্থলজ পরিবেশে যেমন ভেজা মাটি, গাছের বাকল বা পাথরের উপরও দেখা যায়।
* বিভিন্নতা: শৈবাল জীবজগতের একটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠী। এদের বিভিন্ন রঙ (সবুজ, লাল, বাদামী, সোনালী) এবং আকার দেখা যায় যা তাদের রঙ্গক এবং কোষ প্রাচীরের উপাদানের উপর নির্ভর করে।
* গুরুত্ব: শৈবাল পৃথিবীর প্রাথমিক উৎপাদকদের মধ্যে অন্যতম। এরা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন তৈরি করে বায়ুমণ্ডলে সরবরাহ করে। এরা জলজ খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি এবং অনেক জলজ প্রাণীর খাদ্য উৎস। কিছু শৈবাল মানুষের খাদ্য হিসেবে (যেমন নোরি, কেল্প) এবং বিভিন্ন শিল্পে (যেমন অ্যাগার, ক্যারাগিনান উৎপাদনে) ব্যবহৃত হয়। ডায়াটম জীবাশ্ম ডায়াটোমাইট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
আশা করি এই বৈশিষ্ট্যগুলো শৈবাল সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করবে। যদি আপনার আরও কিছু জানার থাকে, তবে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য
ভাইরাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
গঠন:
* ভাইরাস হলো অকোষীয় এবং অতি আণুবীক্ষণিক সত্তা, যা ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না।
* এদের দেহে কোনো নিউক্লিয়াস বা সাইটোপ্লাজম নেই।
* ভাইরাসের মূল গঠন উপাদান হলো একটি নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA অথবা RNA, কিন্তু কখনোই দুটো একসাথে নয়) যা একটি প্রোটিন আবরণী দিয়ে ঘেরা থাকে। এই প্রোটিন আবরণীকে ক্যাপসিড বলে।
* কিছু ভাইরাসের ক্যাপসিডের বাইরে অতিরিক্ত একটি লিপিডযুক্ত বহিরাবরণ (envelope) থাকতে পারে।
জীবনের লক্ষণ:
* ভাইরাস পূর্ণ পরজীবী (obligate parasite)। এরা জীবন্ত কোষের বাইরে নিষ্ক্রিয় থাকে এবং কোনো বিপাক ক্রিয়া দেখায় না।
* কেবলমাত্র উপযুক্ত পোষক কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এরা বংশবৃদ্ধি করতে পারে। পোষক কোষের অভ্যন্তরে তারা তাদের জিনগত উপাদান ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করে।
* ভাইরাসের নির্দিষ্ট পোষক থাকে, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ভাইরাস সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ধরণের জীব বা কোষকে আক্রমণ করে।
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:
* ভাইরাস আকারে ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে অনেক ছোট (সাধারণত 10 nm থেকে 300 nm পর্যন্ত)।
* ভাইরাসের বিভিন্ন আকার ও আকৃতি দেখা যায়, যেমন - গোলাকার, দণ্ডাকার, ঘনক্ষেত্রাকার, ব্যাঙাচির মতো, সূত্রাকার ইত্যাদি।
* ভাইরাসের জিনোম খুব ছোট হতে পারে এবং এতে খুব অল্প সংখ্যক জিন থাকতে পারে।
* ভাইরাস মিউটেশন ঘটাতে সক্ষম, যার ফলে নতুন প্রকারের ভাইরাসের সৃষ্টি হতে পারে।
* ভাইরাসকে কেলাসিত (crystallized) করা সম্ভব, যা এদের জড় বস্তুর মতো আচরণ প্রমাণ করে।
ভাইরাস জীব ও জড়ের মাঝে একটি স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকে। জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে এরা জীবের মতো বংশবৃদ্ধি করে, আবার কোষের বাইরে এরা জড় পদার্থের মতো নিষ্ক্রিয় থাকে।