যুক্তফ্রন্ট থেকে ছয়দফা-১ Flashcards
(38 cards)
তৎকালীন পাকিস্তানের শিক্ষা আন্দোলন হয় কবে?
১৯৬২।
☑ শরীফ শিক্ষা কমিশন: ১৯৫৮ সালে কমিটি গঠন করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে ৪ জন সদস্য ছিলেন-ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আব্দুল হক, আতোয়ার হোসেন, ড. এ রশিদ। এই কমিশন রিপোর্ট প্রকাশ করে ১৯৬২ সালে।
✔ ১৯৬২ সালে রিপোর্ট অনুযায়ী
-শিক্ষার মাধ্যম: ইংরেজি,
-জনগণের ভাষা: উর্দু,
-বর্ণমালা: আরবী,
-অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে অবাস্তব কল্পনা বলে উল্লেখ করা হয়।
✔ এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রসমাজ হরতাল ডাকে। পুলিশ গুলি চালালে বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্ল্যাহ নিহত হন।
১৯৬৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরকে ‘শিক্ষা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে রিপোর্ট স্থগিত করা হয়।
বাংলাদেশের শিক্ষা দিবস কত তারিখ?
১৭ সেপ্টেম্বর।
ব্যাখ্যা:
বাংলাদেশের শিক্ষা দিবস ১৭ সেপ্টেম্বর। তৎকালীন শরীফ শিক্ষা কমিশন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন ১৯৬২ সালে।
✔ ১৯৬২ সালে রিপোর্ট অনুযায়ী
-শিক্ষার মাধ্যম: ইংরেজি,
-জনগণের ভাষা: উর্দু,
-বর্ণমালা: আরবী,
-অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে অবাস্তব কল্পনা বলে উল্লেখ করা হয়।
✔ এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রসমাজ হরতাল ডাকে। পুলিশ গুলি চালালে বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্ল্যাহ নিহত হন।
১৯৬৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরকে ‘শিক্ষা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে রিপোর্ট স্থগিত করা হয়।
কত সালে পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র রচিত হয়?
১৯৫৬।
১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ, পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র রচিত হয়। প্রথম শাসনতন্ত্রের ফলে পূর্ব বাংলার নাম হয়-পূর্ব পাকিস্তান।
পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকার হয়-১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারের পতন হয় ১৯৫৭ সালে। সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয় ১৯৫৯ সালে
রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কে?
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকার হয়-১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারের পতন হয় ১৯৫৭ সালে। সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয় ১৯৫৯ সালে।
কাগমারী সম্মেলন এর সভাপতিত্ব করেন কে?
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
☑ ‘কাগমারী সম্মেলন’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে ৬-১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার কাগমারী নামক স্থানে। প্রধান অতিথি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সভাপতিত্ব করেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
উক্ত সম্মেলনে ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শোষণের প্রতিবাদে পশ্চিম পাকিস্তানকে “আসসালামু আলাইকুম” জানান।
এই সম্মেলন পরিবর্তিতে পাকিস্তানের বিভক্তি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বিশেষ ইঙ্গিতবহ ভূমিকা রাখে।
১ম সামরিক শাসন জারি করা হয় কবে?
: ৭ অক্টোবর, ১৯৫৮।
প্রথম সামরিক শাসন ৭ অক্টোবর’৫৮, প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা জারি করেন।
ইস্কান্দার মির্জা ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করেন। পরে ২০ দিনের মাথায় আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন, ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮। ২৮ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন।
সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয় কবে?
১৯৫৯।
১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ, পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র রচিত হয়। প্রথম শাসনতন্ত্রের ফলে পূর্ব বাংলার নাম হয়-পূর্ব পাকিস্তান।
পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকার হয়-১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। রিপাবলিকান কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারের পতন হয় ১৯৫৭ সালে। সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয় ১৯৫৯ সালে। সোহরাওয়ার্দী মারা যান-১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর, লেবাননের রাজধানী বৈরুতে।
নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ এর সভাপতি ছিলেন?
হোসেন সোহরাওয়ার্দী।
‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ এর সভাপতি ছিলেন হোসেন সোহরাওয়ার্দী।
২১ দফা কর্মসূচির প্রণেতা ছিলেন কে?
আবুল মনসুর আহমদ।
একুশ দফা ছিল যুক্তফ্রন্টের ইশতেহার। ২১ দফার প্রণেতা ছিলেন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবুল মনসুর আহমদ। একুশ দফার মধ্যে ভাষা সংক্রান্ত দফা ছিল ৫টি। যথা: ১, ১০, ১৬, ১৭, ১৮ নং দফা।
✔ একুশ দফার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফা:
০১। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান।
০৯। দেশের সর্বত্র একযোগে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন।
১০। কেবল মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
১৫। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করা।
১৬। পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ‘বর্ধমান হাউস’কে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলার ভাষার গবেষণাগারে (বর্তমানে এটি বাংলা একাডেমি) পরিণত করা।
১৭। ৫২-এর ভাষা শহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার নির্মাণ।
১৮। ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা।
১৯। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলাকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান। দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সবকিছু পূর্ব বাংলার সরকারের হাতে ন্যস্ত করা। আত্নরক্ষার স্বার্থে পূর্ব বাংলায় অস্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থানান্তর।
বাংলার মুক্তির সনদ-
ছয় দফা।
✔ ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লাগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফাকে বাংলার মুক্তির সনদ বলা হয়।
✔ স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর ছিল- ৬ দফা। ✔ ৬ দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর উক্তি- ‘‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য”।
✔ ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ইশতেহার ছিল ৬ দফা। ✔ ৭ জুন ‘‘৬ দফা দিবস’’ পালিত হয়ে আসছে- ১৯৬৬ সাল থেকে। ✔ ৬ দফাকে বলা হয়- বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা।
কাগমারি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়-
১৯৫৭ সালে।
১৯৫৭ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেলার কাগমারী নামক স্থানে কাগমারি সম্মেলন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৮ই ফেব্রুয়ারি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি আরম্ভ হয়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের পর পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন-
এ কে ফজলুল হক।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে যুক্তফ্রন্ট শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করে। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রির দায়িত্ব ছাড়াও অর্থ, রাজস্ব ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের দায়িত্ব নেন। মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আবু হোসেন সরকার বিচার, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার, সৈয়দ আজিজুল হক শিক্ষা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্ব লাভ করেন।
মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অবসান ঘটে। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৪ সালের ৩০ মে পূর্ববাংলায় গভর্নরের শাসন ঘোষণা করে। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার মেয়াদ ছিল ৫৬ দিন।
শিক্ষা আন্দোলন হয়-
১৯৬২ সালে।
১৯৬২ সালে সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ তিন স্তরের আন্দোলন শুরু করে। এর মধ্যে শিক্ষা আন্দোলন বা শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন অন্যতম। কতগুলো বৈষম্যমূলক রিপোর্ট এর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ আইয়ুব খান প্রবর্তিত শিক্ষা কমিশন বা ‘শরীফ কমিশন’ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে।
প্রাক্তন পাকিস্তানকে বিদায় জানাতে “আসসালামু আলাইকুম” জানিয়েছিলেন কে ?
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
কাগমারী সম্মেলনে প্রাক্তন পাকিস্তানকে বিদায় জানাতে “আসসালামু আলাইকুম” জানিয়েছিলেন মাওলালা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে ৬-১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার কাগমারী নামক স্থানে। প্রধান অতিথি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সভাপতিত্ব করেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
এই সম্মেলন পরিবর্তিতে পাকিস্তানের বিভক্তি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বিশেষ ইঙ্গিতবহ ভূমিকা রাখে।
বাংলায় ঋণ সালিশি আইন কার আমলে প্রণীত হয়?
এ. কে. ফজলুল হক।
১৯৩৭ সালে সারা বাংলায় ঋণ সালিশি আইন চালু করা হয়। মূলত গরীব চাষিদের জমি রক্ষ্যার্থে এই আইন চালু করেন এ. কে. ফজলুল হক।
ঐতিহাসিক ছয় দফার ষষ্ঠ দফা ছিল-
আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন।
বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ নামে পরিচিত বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষিত হয় ১৯৬৬ সালে।
• দফা গুলো হলো:
প্রথম দফা: প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।
দ্বিতীয় দফা: কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা,
তৃতীয় দফা: মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা,
চতুর্থ দফা: রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা,
পঞ্চম দফা: বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা এবং
ষষ্ঠ দফা: আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা।
৬ দফা দাবীতে সারা দেশে ৩৫ দিনে মোট কতটি জনসভায় বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু?
৩২টি।
৬ দফা দাবীতে সারা দেশে ৩৫ দিনে মোট ৩২টি জনসভায় বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু। ৬ দফা ঘোষণার কারণে ১৯৬৬ সালের ৮মে থেকে ১৯৬৯ এর ২২ ফেব্রুয়ারি একটানা ৩৩ মাস কারাবন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
৬ দফা আন্দোলনের প্রথম শহিদ ছিলেন?
মনু মিয়া।
☑ ৬ দফা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট:
১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫ সালের কাশ্মীর যুদ্ধের অবসান হয়। তাই তাসখন্দ চুক্তি পর্যালোচনার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা ১৯৯৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে একটি জাতীয় সম্মেলন ডাকেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিনিধি দল পাঠাতে চেয়েছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক মানিক মিয়া ‘মুজিবর মিয়া, যদি যেতেই হয়, আপনিই যান। আর আপনার মনে এতকাল যে কথাগুলো আছে, সেগুলো লিখে নিয়ে যান। ওরা শুনুক, না শুনুক এতে কাজ হবে।
শেখ মুজিব সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি যাবেন। লাহোরে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তার টকিং পয়েন্ট লিখে দেয়ার জন্য। বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তা কুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ৭ দফা লিখে দেন। ৭ম দফার গভর্নরের শাসন সম্পর্কে ছিল। যেহেতু আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চায়। তাই ৭ম দফা বাদ দিয়ে তাজউদ্দীন আহমেদ ও রুহুল কুদ্দুস ইংরেজিতে ৬টি দফা চূড়ান্ত করে। ৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন ও নূরুল ইসলামকে নিয়ে শেখ মুজিৰ লাহোরে যান।
এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার দাবি সংবলিত একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন যার শিরোনাম ছিল ‘আমাদের বাঁচার দাবি’। ইতিহাসে এটি ছয় দফা কর্মসূচি নামে পরিচিত।
পরবর্তীতে ১৭ এপ্রিল ছয় দফার জন্য গ্রেপ্তার হন বঙবন্ধু। ১৯৬৬ সালে ৭ জুন বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি ও ছয়দফা দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালিত হয়। এই দিন তেজগাঁও এলাকায় পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নেতা মনু মিয়া নিহত হন। তিনি ছয়দফার ১ম শহিদ। এ কারণে ৭ জুন ছয়দফা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
৬ দফাকে আইয়ুব খান কী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন?
বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচী।
৬ দফাকে আইয়ুব খান বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ঐতিহাসিক ৬-দফাকে কিসের সাথে তুলনা করা হয়?
ম্যাগনা কার্টা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য ১৯৬৬ সালের ৫ - ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি পেশ করেন। এ কর্মসূচিকে বাংলার জনগণ ম্যাগনাকার্টা হিসেবে গ্রহণ করে। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু এ ছয় দফাকে পূর্ব পাকিস্তানের ‘বাঁচার দাবি’ বলে অভিহিত করেন।
একুশ দফার প্রধান দাবী ছিলো কোনটি?
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা।
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। একুশ দফা প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন আবুল মনসুর আহমেদ। ২১ দফার প্রথম দফা বা দাবী ছিলো বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা।
এছাড়া অন্যান্য দাবীর মধ্যে ছিলো:
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন,
বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত করা,
অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন প্রভৃতি।
২১ দফার ১৫ তম দফা কী ছিল?
বিচার বিভাগ থেকে শাসন বিভাগ পৃথক করা।
একুশ দফার দাবিসমূহ-
১) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে।
২) বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ এবং খাজনা হ্রাস ও সার্টিফিকেট মারফত খাজনা আদায় রহিত করা হবে।
৩) পাট ব্যবসা জাতীয়করণ এবং তা পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় আনা এবং মুসলিম লীগ শাসনামলের পাট কেলেঙ্কারির তদন্ত ও অপরাধীর শাস্তি বিধান করা।
৪) কৃষিতে সমবায় প্রথা প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে কুটির শিল্পের উন্নয়ন।
৫) পূর্ববঙ্গকে লবণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
৬) কারিগর শ্রেনীর গরিব মোহাজেরদের কর্মসংস্থানের আশু ব্যবস্থা।
৭) খাল খনন ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বন্যা ও দূর্ভিক্ষ রোধ।
৮) পূর্ববঙ্গে কৃষি ও শিল্প খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) মূলনীতি মাফিক শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
৯) দেশের সর্বত্র অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা।
১০) শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভেদাভেদ বিলোপ করে সকল বিদ্যালয়কে সরকারি সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
১১) ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল আইন বাতিল এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করা।
১২) শাসনব্যয় হ্রাস, যুক্তফ্রন্টের কোনো মন্ত্রীর এক হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ না করা।
১৩) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ-রিশ্ওয়াত বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
১৪) জননিরাপত্তা আইন, অর্ডিন্যান্স ও অনুরূপ কালাকানুন বাতিল, বিনাবিচারে আটক বন্দির মুক্তি, রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্তদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার এবং সংবাদপত্র ও সভাসমিতি করার অবাধ অধিকার নিশ্চিত করা।
১৫) বিচারবিভাগকে শাসনবিভাগ থেকে পৃথক করা।
১৬) বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে কম বিলাসের বাড়িতে যুক্তফ্রন্টের প্রধান মন্ত্রীর অবস্থান করা এবং বর্ধমান হাউসকে প্রথমে ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা।
১৭) রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ঘটনাস্থলে শহিদ মিনার নির্মাণ করা এবং শহিদদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
১৮) একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা।
১৯) লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বায়ত্তসাশন এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মূদ্রা ব্যতীত সকল বিষয় পূর্ববঙ্গ সরকারের অধীনে আনয়ন, দেশরক্ষা ক্ষেত্রে স্থলবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে এবং নৌবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন এবং পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্রনির্মাণ কারখানা স্থাপন ও আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা।
২০) কোনো অজুহাতে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কর্তৃক আইন পরিষদের আয়ু না বাড়ানো এবং আয়ু শেষ হওয়ার ছয়মাস পূর্বে মন্ত্রিসভার পদত্যাগপূর্বক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
২১) যুক্তফ্রন্টের আমলে সৃষ্ট শূন্য আসন তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং পরপর তিনটি উপনির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী পরাজিত হলে মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করা।
দেশের সর্বত্র একযোগে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন’, একুশ দফার কত নং দফা?
৯ নং।
একুশ দফার ৯ নং দফায় ছিল- ‘‘দেশের সর্বত্র একযোগে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন’‘।
☛ একুশ দফা সম্পর্কে বিশেষ তথ্য:
-একুশ দফা ছিল যুক্তফ্রন্টের ইশতেহার।
-২১ দফার প্রণেতা ছিলেন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবুল মনসুর আহমদ।
-একুশ দফার মধ্যে ভাষা সংক্রান্ত দফা ছিল ৫টি। যথা: ১, ১০, ১৬, ১৭, ১৮ নং দফা।
একুশ দফার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফা:
০১। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান।
০৯। দেশের সর্বত্র একযোগে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন।
১০। কেবল মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
১৫। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করা।
১৬। পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ‘বর্ধমান হাউস’কে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলার ভাষার গবেষণাগারে (বর্তমানে এটি বাংলা একাডেমি) পরিণত করা।
১৭। ৫২-এর ভাষা শহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার নির্মাণ।
১৮। ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা।
১৯। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলাকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান। দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সবকিছু পূর্ব বাংলার সরকারের হাতে ন্যস্ত করা। আত্নরক্ষার স্বার্থে পূর্ব বাংলায় অস্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থানান্তর।
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু কোন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিল?
সমবায়, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন।
পূর্ব বাংলার যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার প্রথম মূখ্যমন্ত্রীর নাম এ কে ফজলুল হক। তিনি ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সমবায়, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী। এই মন্ত্রিসভা মাত্র ৫৬ দিন স্থায়ী ছিল।